হুমায়ূন কবীর ফরীদি, স্টাফ রিপোর্টারঃ
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর এলাকার হবিবপুর গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের হলিয়ারপাড়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার বিতর্কিত অধ্যক্ষ মাওলানা ড. মইনুল ইসলাম পারভেজকে অবশেষ জেল হাজতে পাঠালেন আদালত। জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের হলিয়ারপাড়া গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী, বিশিষ্ট শালিসি ও দানশীল ব্যক্তি মোঃ নুর মিয়ার দায়ের করা ব্যাংক একাউন্টে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাত মামলায় জেলে গেলেন মাওলানা মইনুল ইসলাম পারভেজ। এর আগে প্রবাসী নুর মিয়ার বিরুদ্ধে ৫০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করে দেশ ও বিদেশে নানা বিতর্কের সৃষ্টি করেন মইনুল ইসলাম পারভেজ।
অন্যকে ফাসাতে গিয়ে এবার তিনি নিজেই ফেসে গেলেন। পাপ কখনো বাপকেও ছাড়ে না এ প্রবাদটি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রচলিত রয়েছে। মইনুল ইসলাম পারভেজ জেলে যাওয়ার পর স্থানীয়রা এভাবেই নানা মন্তব্য করছেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানাগেছে, ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রবাসীদের উদ্যোগে অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের সাহায্যার্থে ও হলিয়ারপাড়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের শিক্ষার কাজে ব্যয় করার জন্য ইসলামী ব্যাংক জগন্নাথপুর শাখায় একটি যৌথ সেভিংস একাউন্ট খোলে ১৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জমা রাখা হয়। উক্ত যৌথ একাউন্টের হোল্ডার ছিলেন হলিয়ারপাড়া গ্রামের প্রবাসী নুর মিয়া, নজিপুর গ্রামের আবদুর রহিম ও মিরপুর গ্রামের আলতাব আলী ওরফে আলফু মিয়া। একাউন্টের নমিনী করা হয়, হলিয়ারপাড়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম পারভেজকে।
এর মধ্যে বিগত ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে প্রবাসী নুর মিয়া ইসলামী ব্যাংক জগন্নাথপুর শাখায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, তাদের যৌথ একাউন্টের লভ্যাংশ সহ সমুদয় টাকা অন্যান্য প্রবাসী একাউন্ট হোল্ডারদের সহযোগিতায় অধ্যক্ষ মঈনুল ইসলাম পারভেজ আত্মসাত করে তার নিজ নামীয় মাদ্রাসার একাউন্টে সরিয়ে নিয়েছেন।
এ ঘটনায় হতবাক প্রবাসী নুর মিয়া জগন্নাথপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ফের যুক্তরাজ্যে চলে যান। যদিও বিষয়টি জগন্নাথপুর উপজেলার বিশিষ্ট মহল সহ হলিয়ারপাড়া মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সভাপতির নজরে এলে সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রবাসীদের সাথে আলোচনা হলেও কোন সমাধান হয়নি। এ সুযোগে উদর পিন্ডি বুদুর ঘাড়ে চাপাতে যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় প্রবাসী নুর মিয়ার বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম পারভেজ বাদী হয়ে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-০৬, ঢাকাতে ৫০ কোটি টাকার মানহানিকর মামলা দায়ের করেন। যার নং-(সিআর ১৫/২৩ হাতিরঝিল)। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ মাসুদ রানা তদন্ত অনুসন্ধানে প্রবাসী নুর মিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এদিকে-উক্ত মামলার খবর পেয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবার দেশে ফিরেন প্রবাসী নুর মিয়া। এ সময় প্রবাসী নুর মিয়া বাদী হয়ে তাদের যৌথ একাউন্টের টাকা মইনুল ইসলাম পারভেজ কর্তৃক অন্যান্য প্রবাসীদের সহযোগিতায় আত্মসাতের অভিযোগ এনে আমল গ্রহণকারী আদালত, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জে (সিআর মামলা নং- ১৫ /২৩ দায়ের করেন। আদালত মামলাটির তদন্তভার অফিসার ইনচার্জ জগন্নাথপুর থানাকে অর্পণ করেন এবং জগন্নাথপুর থানার এসআই শহিদুল ইসলাম তদন্তকালে প্রবাসী নুর মিয়ার একাউন্টের স্বাক্ষরের সাথে পরবর্তী একাউন্টের স্বাক্ষরের মিল না পেয়ে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের সুস্পষ্ট মতামতের ভিত্তিতে জাল-জালিয়াতি প্রমাণিত হলে অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম পারভেজ সহ প্রবাসী আবদুর রহিম, আলতাব আলী ওরফে আলফু মিয়া ও আবদুর রহিমের ভাগ্নে হলিয়ারপাড়া মাদ্রাসার শিক্ষক মহিউদ্দিন এমরানের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম পারভেজ সহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তখন গ্রেফতার এড়াতে মইনুল ইসলাম পারভেজ ও মহিউদ্দিন এমরান উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেন।
অবশেষে ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে মহি উদ্দিন এমরানের জামিন মঞ্জুর করলেও অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম পারভেজের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন আদালত। মামলার অপর আসামী আবদুর রহিম ও আলতাব আলী ওরফে আলফু মিয়া পলাতক রয়েছেন। উক্ত মামলার বাদী প্রবাসী নুর মিয়ার কৌশলি অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী নুর মিয়া বলেন, আমরা প্রবাসীরা ট্রাস্ট গঠন করে নিজেরা টাকা জমিয়ে হলিয়ারপাড়া মাদ্রাসার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদান করে আসছিলাম। এ টাকা তারা আত্মসাত করে উল্টো আমার উপর ৫০ কোটি টাকার মামলা দিয়ে মানহানি ও হয়রানী করেছে। আদালতে এ মামলাটি মিথ্যা বলে প্রমাণিতও হয়েছে। তবুও আমি তাদেরকে অনেক সুযোগ দিয়েছি, সামাজিক ভাবে সমাধান করার জন্য। তারা তাও মানেনি। আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাসাতে গিয়ে এখন নিজেই ফেসে গেলেন মাওলানা মইনুল ইসলাম। এর জন্য দায়ী তিনি ও তার সহযোগীরা।
এছাড়া মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজের বিরুদ্ধে জগন্নাথপুর পৌর এলাকার কেশবপুর গ্রামের শাহনাজ পারভিন লিসা নামের এক মহিলার কাবিননামায় তার নাম মুছে মোসাম্মৎ সাজেদা বেগম নামের অন্য মহিলার নাম বসিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশ গমণে সহায়তার অভিযোগে শাহনাজ পারভীন লিসা বাদী হয়ে আমল গ্রহণকারী আদালত, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জে (সিআর মামলা নং-৩৮/২০২৩) দায়ের করেন। এ মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশন সিলেটে তদন্তাধীন আছে।