ঝালকাঠিতে জিএমএ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বীরমুক্তিযাদ্ধা মরহুম ডা: মুজিবুর রহমান স্বরনে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত

নিজেস্ব প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠিতে জিএমএ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষানুরাগী বীরমুক্তিযোদ্ধা ঢাকা মেডিকেল এসোসিয়েশনর সাবেক যুগ্ন-সম্পাদক (১৯৭৩-৭৪) মরহুম ডা: মুজিবুর রহমান স্বরনে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত। সদর উপজেলাধীন ভারুকাঠি জি এম এ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কতৃক অায়োজিত ২৪ আগষ্ট শনিবার সকাল ১১টায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত পাঠ করার মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত অালোচনা সভা মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠান শুরু হয়। উক্ত মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার বক্তব্যে বলেন, ১৯৯৯ সাল থেকে ডাঃ মুজিবুর রহমান আমাদের বিদ্যালয়ের গরীব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরন, শিক্ষাবৃত্তি সহ গরীব শিক্ষার্থীদের মাঝে আর্থিক সাহায্য করে আসছিলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে তার আর্থিক সহযোগীতা করার জন্য এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য তার পিতা মরহুম আসমত আলী লস্করের নামে আসমত আলী ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেন এবং সেখান থেকেই তিনি প্রতি বছর গরীব শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা উপকরন সহ আর্থিক ভাবে সহযোগীতা করতেন। এ বিষয় বিদ্যালয়ের সিনয়র সহকারী শিক্ষিকা নিগার সুলতানা জোসনা তার বক্তব্যে বলেন, অনেক বছর আগে ডাঃ মুজিবুর রহমানের সাথে এই স্কুলে আমার দেখা হয় তখন আমি তাকে এই বিদ্যালয়ের গরীব ছাত্রছাত্রীদের পাশে এসে দাড়ানোর আহবান জানালে তিনি আমার আহবানে সাড়া দিয়ে গরীব মেধাবি শিক্ষার্থীদের সাহায্য এগিয়ে আসেন। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, মরহুম মজিবুর রহমানের ভাতিজা মোঃ আলামিন লস্কর বলেন, আমার চাচা যদি কাউকে সাহায্য করতেন সেটা তার পরিবারের কেউই জানতো না। এই বিদ্যালয় ছারাও অনেক স্থানে অনেক সামাজিক কাজ, গরীবদের আর্থিক সাহায্য সহযোগীতা করেছেন যা আমরা তার মৃত্যুর পরে জানতে পারি। আমি যতটুকু তার সম্পর্কে জানি তিনি ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ৮ ভাই বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলো মুজিবরি রহমান (মনা) ৩ বছর বয়সে মাকে হারান। মনে কষ্টের বিশাল ছায়া থাকলেও মায়ের অভাব অনেকটাই পূরন হয়ে যায় বোন ভাইদের পরম স্নেহের আদরে। দরিদ্র অথচ শিক্ষানুরাগী বাবার সন্তানদের শিক্ষিত করার প্রচন্ড ইচ্ছা উদ্দীপ্ত হয় তাঁর মধ্যে। বরিশাল থেকে ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন। তিনি ১৯৭০ সালে ৫ম বর্ষ এমবিবিএস ছাত্র ছিলেন। এরই মধ্যে এসে গেল মহান মুক্তিযুদ্ধ তিনি ডাক্তারি পাশের চূড়ান্ত পর্বে আসলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ঝাপিয়ে পড়লেন মুক্তিযুদ্ধে। সর্বাত্বক গ্রাম থেকে গ্রামে,শহরে এর পর ভারতের মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্পে। তার এই অসামান্য তৎপরতায় ক্ষীপ্ত হয়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা তাকে হত্যা করার জন্য আক্রমন করে কিন্ত তিনি কোন মতে বেঁচে যান। পরে তিনি গ্রামের মানুষের ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া, রাস্তা ঘাট তৈরী, মসজিদ নিমাণ, যখন যে কোন সমস সহযোগীতা করেছেন। এমনকি তার উত্তারাধিকার প্রাপ্ত গ্রামের জমি মসজিদ মাদ্রাসায় দান করেছেন। প্রচার বিমুখ ছিলেন। এই সকল দান তিনি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে জানাতেন না। স্কুলের গরীব মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি দেয়া হয় তার অর্থে কিন্তু তার বাবার নামে, যা আমরাও জেনেছি অন্যের মুখে অনেক পরে। শত ব্যস্ততার মাঝেও সহজে নামাজ ছাড়তেন না, যাকাত আদায় করতেন নিয়মিত। একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক, চিকিৎসক, শিক্ষানুরাগী, ধার্মিক, গরীব অসহায়দের সহযোগীতাকারী, নিরাহংকারী, অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী , বড়দের সম্মান ছোটদের স্নেহেকারি ছিলেন তিনি যা বর্তমানে বিরল। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক আবদুস সালামের সঞ্চালনায় মিলাদ শেষে মরহুমের রুহের আত্মার মাগফির কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। উক্ত দোয়া অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।