নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে সচেতনতা ফেরি করেন তিনি

মো. রাশিদুল ইসলাম, গুরুদাসপুর
(নাটোর)
কখনো পথে। কখনো বিদ্যালয়ে। কখনো বা
গ্রামে ঘুরে তিনি সচেতনতা ফেরি করেন।
লিফলেট বিতরণ অথবা প্রজেক্টরে
সচেতনতামূলক ভিডিও চিত্র দেখানোর
মাধ্যমে। উদ্দেশ্য ঘুমন্ত মানুষদের সজাগ
করা। মূলত এই অভিযানের মাধ্যমেই তিনি
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করনের স্বপ্ন
দেখেন।
এই সচেতনতার ফেরিওয়ালা উপজেলা
সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ
রানা সরকার। তিনি সরকারী দায়িত্ব
পালনের পর বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এই
কার্যক্রম চালান। মাসুদ রানা গুরুদাসপুর
উপজেলা শিক্ষা অফিসে কর্মরত। তিনি
শুধু যে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতেই এসব
সচেতনতামূলক কাজ করেন তা নয়। বাল্য
বিয়ে, গ্রাম্য কুসংস্কারসহ বিভিন্ন
বিষয়ে শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধদের
সচেতন করেন।
কেন ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ নিয়েছেন সে
ব্যাপারে মো. মাসুদ রানা সরকার জানান,
গ্রামে এখনো কুসংস্কার রয়েছে। বাল্য
বিয়ের ঘটনা বিদ্যমান। এমন কোন দিন নেই
যে দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে না।
তিনি মনে করেন, এসব বিষয়গুলো
সামাজিক ব্যাধি। সচেতনতার অভাবেই
এগুলো বেশি সংগঠিত হচ্ছে। মানুষদের
সচেতন করে তুললে অবশ্যই এসব অভিশাপ
দুর করা সম্ভব। তাই তিনি নিজ উদ্যোগে
২০১০ সাল থেকে এই সচেতনমূলক কাজটি শুরু
করেন।
তিনি মনে করেন, শিক্ষা কর্মকর্তা হওয়ার
পর পর কাজটি সহজ হয়েছে। কারণ শিক্ষক-
শিক্ষার্থী নিয়েই তিনি আছেন। তাই
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতার
এই সুবাতাস বইয়ে দিতে পারলে মানুষ
সহজেই সচেতন হতে পারবে। তাই তিনি
গ্রামে গ্রামে ঘুরে সভা, সমাবেশ, র্যা
লি, আলোচনার মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা,
বাল্য বিয়ে রোধসহ সামাজিক কুসংস্কার
রোধে মাল্টিমিডিয়া প্রোজেক্টরের
মাধ্যমে ভিডিও চিত্র দেখান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা
কর্মকর্তা মাসুদ রানা নাটোরের সিংড়া
উপজেলার হাটকদমালী গ্রামের
বাসিন্দা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই
সন্তানের জনক। ২০১০ সালে চাকরিতে
যোগদানের পর মেহেরপুর সদর, নাটোর সদর,
গুরুদাসপুরে সচেতনতামূলক এই কাজ
করেছেন।
সম্প্রতি সহকারী এই শিক্ষা কর্মকর্তা
গুরুদাসপুর উপজেলার রশিদপুর সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সেমিনার
করেন। সেখানে নাজিরপুর ক্লাস্টারের
অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, বিদ্যালয়
পরিচালনা কমিটির সদস্যসহ ২৬টি
বিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষক এবং
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রোজেক্টরের
মাধ্যমে বিভিন্ন সচেতনতামূলক ভিডিও
চিত্র দেখান। তিনি বলেন, শিক্ষকরা যদি
যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তবে
তাদের হাতে ন্যস্ত সমাজের অগণিত শিশু
অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দুর্ঘটনার হাত থেকে
রক্ষা পাবে।
গুরুদাসপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা
কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলাম বলেন,
সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ রানা
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পর অবসর সময়
না কাটিয়ে তিনি ছুটে চলেন সচেতনতা
ফেরি করতে। মাসুদ রানার মতো এভাবে
সবাই যদি সচেতনতার দায়িত্ব নিতেন
তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা, বাল্য বিয়েসহ নানান
কুসংস্কার সহজেই দুর হতো।