হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।
প্রতিটি নতুন সকালেই কল্যাণের ফুল ফোটে, পাখিরা কল্যাণের খোঁজে ছোটে, তাদের ঠোঁটে মহামহীয়ান আল্লাহর তাসবিহ রব ওঠে। মুমিনরা মহান আল্লাহকে সিজদা করার মাধ্যমে সেদিনের যাবতীয় কল্যাণের দ্বার উন্মোচিত করার জন্য মসজিদের দিকে ছোটে। মহান আল্লাহ রাত ও দিনের আবর্তন তাঁর বান্দাদের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি রাত ও দিনকে করেছি দুটি নিদর্শন।
অতঃপর মুছে দিয়েছি রাতের নিদর্শন এবং দিনের নিদর্শনকে করেছি আলোকময়, যাতে তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো এবং যাতে তোমরা বর্ষসংখ্যা ও হিসাব জানতে পারো। আর আমি প্রত্যেক বিষয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১২)
জীবনের প্রতিটি সকাল প্রতিটি দিনই মানুষের জন্য কল্যাণকর। মুমিনের প্রতিটি দিন তাকে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে অগ্রগামী হতে সাহায্য করে।
আর অবিশ্বাসীর জন্য প্রতিটি দিন তাকে পাপের পথ থেকে তাওবা করে মহান আল্লাহ কাছে ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়। প্রতিটি মুহূর্ত তাকে ডেকে বলে এখনো সময় আছে সাচ্ছা তাওবা করে কল্যাণের পথে ফিরে এসো। কল্যাণের পথে অগ্রগামী হওয়ার এই সুযোগ যারা হাতছাড়া করে ফেলে, যারা মহান আল্লাহর দেওয়া সোনালি জীবনকে নাফরমানিতে কাটিয়ে দেয়, তাদের জন্য প্রতিটি সকাল জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একেকটি অগ্নিদরজা মাত্র। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু বকর (রা.) বলেন, কোনো এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! উত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে।
সে আবার প্রশ্ন করল, মানুষের মধ্যে কে নিকৃষ্ট? তিনি বলেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল খারাপ হয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩০)।
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, মুমিন লোকের বয়স তার কল্যাণই বাড়িয়ে থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৭১২)
অর্থাৎ যার ঈমান আছে, আমল ভালো, তার জীবনের প্রতিটি দিন তার আমল ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে। তা ছাড়া প্রতিটি নতুন সকালে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাঝে রিজিক বণ্টন করেন, এটাও মানুষের জন্য কল্যাণ।
নবীজি (সা.) তাঁর কন্যা ফাতেমা (রা.)-কে বলেছেন, মা মণি! ওঠো! তোমার রবের পক্ষ থেকে রিজিক গ্রহণ করো! অলসদের দলভুক্ত হয়ো না। কেননা আল্লাহ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের মধ্যে রিজিক বণ্টন করে থাকেন। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ২৬১৬)
বোঝা গেল মানুষের জীবনের প্রতিটি নতুন সকালই তার জন্য একেকটি কল্যাণের দ্বার খোলে। তাই আমাদের উচিত, জীবনের প্রতিটি নতুন সকালকে আল্লাহর কল্যাণ অন্বেষণ ও গুনাহ থেকে ফিরে আসার সুযোগ হিসেবে দেখা। মহান আল্লাহর শোকর আদায় করা। মহান আল্লাহর নাফরমানি থেকে বিরত থাকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করা। কেননা প্রিয় নবী (সা.) ইবনে উমর (রা.)-কে নসিহত করতে গিয়ে বলেন, ‘…অসুস্থ হওয়ার পূর্বে তোমার সুস্থতার এবং মৃত্যুর পূর্বে তোমার জীবনের সুযোগকে কাজে লাগাও। কেননা, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি তো জান না, আগামীকাল তুমি কি নামে অভিহিত হবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩৩)
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন আমাদের সকলকে উপরোক্ত আলোচনা গুলোর প্রতি গুরুত্ব সহকারে আমল করার তাওফিক দান করুন আমীন।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব।