মো:সাব্বির খান, ইবি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হবে এটা কেউ কখনও কল্পনা করতে পারেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির চক্রান্তে কিছু ভাড়াটি সেনারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল। তিনি আইনমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, অতিদ্রুত বঙ্গবন্ধু হত্যার তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। কারণ জাতি জানতে চাই এই হত্যাকান্ডের মূলনেপথ্যে কারা ছিল।
তিনি বলেন, ৭৫’র হত্যাকান্ডের মধ্যদিয়ে জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে। সাংগঠনিকভাবে জাতি আজ দু’ভাবে বিভক্ত। একটি শক্তি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আর অপরটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে। যতদিন এ বিভক্ত থাকবে ততদিন এদেশ উন্নয়নে বাঁধাগ্রস্থ হবে। তাই জাতির সামনে পরিস্কার হওয়া উচিত, কেন কি কারনে এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল। তাই তদন্ত কমিশন গঠন খুব জরুরী হয়ে পড়েছে।
হানিফ বলেন, ১৯৭০ সালে নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু নিজেকে মাটি ও মানুষের নেতা প্রমাণ করেছিলেন। তিনি বলেন, আমাদের রক্তে লেখা স্বাধীনতা, কোন চক্রান্তের কাছে পরাজিত হতে দেব না। তিনি বলেন, এ বিশে^র সবচেয়ে মানবাধিকার লঙ্খন হয়েছিল ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে। কিন্তু আজ অনেকেই মানবাধিকার নিয়ে বড় বড় কথা বলেন।
হানিফ বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ মে জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। দেশে ফিরতে তাঁকে সেদিন বিভিন্নভাবে বাঁধার সম্মুখিন হতে হয়েছিল। এমনকি সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে ঢুকতে দেয়া হয়নি। সেদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে পিতা-মাতাসহ পরিবারের সকলের জন্য মোনাজাত করেছিলেন।
হানিফ বলেন, এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতার মালিক হচ্ছে জনগণ। দেশের জনগণ সরকারের সাথে আছে। তাই শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে সবাইকে রাজপথে থাকতে হবে এবং সকল অপশক্তিকে রাজপথে মোকাবেলা করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে ২০ আগস্ট সকালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের আয়োজনে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে “মুত্যুঞ্জয়ী মুজিব” শীর্ষক এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি এসব কথা বলেন।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল হাই বলেন, বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। আমরা সেদিন বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু না থাকলে এদেশের স্বাধীনতা আসতো না, আর জননেত্রী শেখ হাসিনা না থাকলে এদেশ উন্নয়নের মুখ দেখতো না। তাই আসুন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় আনতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। সভায় অপর বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আ.কা.ম সরওয়ার জাহান বাদশা।
প্রধান আলোচক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র
মামলায় জুটিশিয়ালি কায়দায় হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের কারনে সেদিন চক্রান্তকারীদের চক্রান্ত সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর থেমে যাওয়া আন্ধকার বাংলাদেশকে আলোর পথে নিয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় না থাকে তাহলে এদেশের উন্নয়ন আবার মুখ থুবরে পরবে। তাই স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে ৭১’র ন্যায় আবারও এক এবং ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় সম্মানিত অতিথি ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবুল আরফিনের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ আয়োজিত জাতীয় শোকদিবস ২০২৩ উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোঃ মিজানুর রহমান। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়।
জাতীয় সংগীত ও ১ মিনিট নিরবতা পালনের মধ্যদিয়ে আলোচনাসভার সূচনা করা হয়। আলোচনাসভার পূর্বে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল হাই এমপি।
এদিকে সকাল ১০টায় অনুষদ ভবনের নিচতলার করিডোরে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের আয়োজনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে রক্তদান কর্মসূচির সম্মিলিতভাবে উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ।