সংবাদ প্রকাশ করায় প্রশাসন তৎপর, কৌশল পাল্টিয়ে থেমে নেই চোরাকারবারীরা

খুলনা জেলা প্রতিনিধিঃসুন্দরবনে অবৈধ মৎস আহরণকারীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় প্রশাসন তৎপর, কৌশল পাল্টিয়ে থেমে নেই চোরাকারবারীরা বাংলাদেশের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দবন রক্ষায় সরকার সকল ধরনের মৎস্য আহরণ বন্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু বিভিন্ন সিন্ডিকেট ও চোরাকারবারীরা বেপরোয়া হয়ে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র ধ্বংসের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি অবৈধ সম্পদের টাকা। আর এই বিষয়টি জাতীয় ও স্থানীয় একাধিক পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে সংবাদ প্রকাশ করায় বন বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসন নড়ে চড়ে বসে। তারা যৌথ ভাবে শুরু করে সাড়াশি অভিযান। জব্দ করে লক্ষ লক্ষ টাকার অবৈধ বিষযুক্ত মাছ, হরিণ শিকারের ফাঁদ, নৌকা, আসামী, বিষের বোতলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। কিন্তু চোরাকারবারীরা তাদের কৌশল পাল্টিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভিন্ন ভাবে অব্যহত রেখেছে তাদের এ সকল অবৈধ মৎস্য আহরণ ও ব্যবসা।
সূত্রে জানা যায়, চোরাকারবারির এই সিন্ডিকেট স্থল পথ বাদ দিয়ে নৌ রুটে বিষ প্রয়োগ করে মারা মাছ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অবৈধ মৎস্য শুটকি খটিতে বিক্রয় করছে। এর মধ্যে কয়রার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের পদ্মপুকুর ও চরামুখা, শ্যামনগর থানার চৌদ্দরশি হয়ে চাকলা ও মুন্সিগঞ্জ অভিমুখে চলে যাচ্ছে এ সকল মাছ। আরো জানা গেছে কয়রা চরামুখা থেকে লোকা খেয়াঘাট ও নাকশা ধামরাইলের বিভিন্ন শুটকি মাছের খটিতে গভীর রাতে বড় ধরনের চালান (আনুঃ ৮-১০ লক্ষ টাকা) প্রেরণ করা হচ্ছে। এছাড়া চক্রটি লঞ্চের মাধ্যমেও অবৈধ মাছ খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করেছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে এ প্রতিনিধিকে বলেন, সুন্দরবন কেন্দ্রিক এই সিন্ডিকেটরা অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা তাদের নিকট এক প্রকার জিম্মি হয়ে আছি। তাদের চাপে ও হুমকিতে আমরা বন্ধের সময় ও অন্যান্য সময়ও তাদেরকে বাজার ছাড়া কমমূল্যে মাছ দিতে বাধ্য হই। মাছ না দিলে আমরা বিভিন্ন হয়রানীর স্বীকার হই। আমরা আর্থিক ভাবে উন্নতি সাধন করতে না পারলেও এই সিন্ডিকেট পাটিরা রাতারাতিই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। আমরা শুধুমাত্র পেটের দায়ে মাছ আহরণ করে থাকি।
একাধিক সুত্রে জানা যায়, এই সিন্ডিকেটের মধ্যে জড়িত আছে কোম্পানী নামধারী অসাধু ব্যবসায়ী, আড়ৎদার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন,সি এম সির সদস্য, সাংবাদিক ও কথিত সুশিল সমাজের কিছু মুখোশধারী ব্যক্তি। তারা অতি সু কৌশলে না ধরি মাছ না ছুই পানি এই নিয়মে দীর্ঘদিন যাবৎ এ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রেখেছে। এদের মধ্যে রক্ষ নামের ভক্ষক হিসাবে পরিচিত বনরক্ষকদের নামও জড়িত আছে। সর্বপরি জনস্বীকৃত বন দস্যুদের পৃষ্ঠ পোষকরা সকল সিন্ডিকেট পরিচালনার মাস্টার মাইন্ড হিসাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
পশ্চিম সুন্দবেরন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডাঃ আবু নাছের মোহসিন হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের লেখনির মাধ্যমে আমি সকল বিষয় অবহিত হয়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে ও প্রবেশদারে বন টহল জোরদার করা হয়েছে। আশাকরি খুব শিঘ্রই মূল হোতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে সক্ষম হবো। আমরা ইতো পূর্বে অভিযান চালিয়ে খুলনা রেঞ্জ থেকে এ সংক্রান্ত ৫১টি মামলা দায়ের, ৫৭ জন আসামীকে আটক, ইঞ্চিন চাীলত ট্রলার ১টি, নৌকা ৪০টি, কাটি জাল ১টি, ভেশাল জাল- ১৭টি, খেওলা জাল ২টি, খালপাটা জাল- ২টি, রেকট জাল- ২টি, আটন ৫৮টি, দোন দড়ি ৩৫০ মিটার, ড্রাম ১৪টি, জবাইকৃত হারিণ ২টি, হরিণ ধরা ফাঁদ ১৬২ মিটার, কাঁকড়া ৩৫ কেজি, বিষ প্রয়োগ করে মারা চিংড়ি মাছ (যাহা বন বিভাগকৃত জব্দ)- ১২০০ কেজিসহ আনুসাঙ্গিত মালামাল জব্দ করা হয়। স্থানীয় মৎস্য বিভাগ ও থানা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে প্রায় ৩০০০ কেজি বিষ প্রয়োগ করা চিংড়ি মাছ জব্দ ও বিভিন্ন ভাবে জরিমানা করা হয়েছে।