সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসে চলছে মহাউৎসব

খুলনা প্রতিনিধিঃ
সুন্দরবনে মাছ শিকারসহ সব ধরনের বনজদ্রব্য আহরণে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছসহ জীববেচিত্র্য ধ্বংসের মহোৎসবে মেতে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। সুন্দরব সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলায় বনদস্যু পৃষ্ঠপোষক নামে পরিচিত জনপ্রতিনিধি ও ছাত্রনেতা পরিচয়ধারী ‘কোম্পানী’ নামধারী কিছু অসাধু মাছ ব্যবসায়ীর ইন্ধনে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে চলেছে দিনের পর দিন। এই সিন্ডিকেটের সাথে চুক্তিসাপেক্ষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কিছু অসাধু বন কর্মকর্তা জড়িত এবং পুলিশ সদস্যরা সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন বন্ধের সময় উপজেলা বিভিন্ন স্থানে রাতারাতি গড়ে ওঠা শুঁটকি খুঁটিতে সন্দরবন বন্ধের সময় হাজার হাজার কেজি বিষ দিয়ে মারা মাছ শুকানো হচ্ছে। এসব সিন্ডিকেটের নেতারা বন বিভাগ ও কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন তাদের অবৈধ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে। এদের অনেকেই বনদস্যুদের পৃ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত এবং একাধিক মামলার আসামি। আবার অনেকেই অবৈধ ব্যবসা ঠিক রাখতে সুন্দরবনকেন্দ্রিক সিএমসি কমিটিতে নাম লিখিয়েছেন, কেউবা টাকার বিনিময়ে হয়েছেন জনপ্রতিনিধি। কোম্পানী নামধারী এ সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন সুন্দরবনকেন্দ্রিক সকল অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। দিনের পর দিন ধ্বংস করে চলেছে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য।
সুন্দরবনকেন্দ্রিক এসব ব্যবসা করে এই সিন্ডিকেটের নেতারা রাতারাতি কোটিপটি হয়ে গেছেন। গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসী বিশাল গ্রুপ। এই সদস্যদের টাকার বিনিময়ে সরকারি দলের ও তাদের অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পদ-পদবি নিজে পাওয়াসহ তাদের পাইয়ে দেয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাছ ও হরিণের মাংসসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও মূল হোতারা থাকছে বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ রয়েছে সিন্ডিকেটের বাইরে কোন জেলে মাছ ধরতে সুন্দরবনে গেলে তাদেরকে বন বিভাগের কর্মকর্তা ও পুলিশ দিয়ে মাছসহ ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যারা মাছ ধরছে তারা নিরদ্বিধায় মাছ ধরছে কোন ঝুঁকি ছাড়া। দুই একবার সিন্ডিকেটের মাছ ধরলে সিন্ডিকেটের নেতারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে তাদের লোক ও মাছ ছাড়া। এরা প্রভাবশালী হওয়ায় এই সিন্ডিকেটর নেতারা চিহ্নিত হওয়া সত্বেও বার বার থাকছে ধরা ছোয়ার বাইরে।কয়রার মহেশ্বরীপুরের শেখেরকোনা, কালিবাড়ি, তেতুলতলা,সুতির কোনা ,৪ নং কয়রা, ৫ নং কয়রা, ৬নং কয়রা, কাটকাটা, চরামুখা, দক্ষিণবেদকাশি, ছোট আংটিহারাসহ এলাকার অসাধু জেলেরা প্রতিনিয়ত এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে নিষিদ্ধ ঘন ফাঁসের ভেষালি জাল ও কর্ড বিষ নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে মাছ শিকার ও হরিণ শিকার করছে। গহীন বনের নলবুনি, খড়খুড়ি, মার্কি, আদাচাকি, দুধমুখ, পিনমারা, চালকি, গেড়া, নাটুয়া ভারানি, মোল্লাখালি, জোলাখালি, বজবজা, খাসিটানা, গেওয়াখালি, ভোমরখালি, পাথকষ্টা সহ অন্যান্য খাল ও ভারানিতে চিংড়িসহ অন্য প্রজাতির মাছ শিকার করছে তারা। অবৈধ জেলেরা তাদের আহরণকৃত চিংড়ি ভোররাতে, চোরামুখা দিয়ে নদী করে মুন্সিগঞ্জ ও নওয়াবেকী নিয়ে যাচ্ছে, উপজেলা সদরের দেউলিয়া মৎস্য আড়ত, চাঁদআলী মৎস্য সেটে বেচাবিক্রি করছে বলে সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। স্থানীয় শুটকির ফড়িয়ারা ও এই সিন্ডিকেটের গড়ে তোলা শুটকি খটি পাশ্ববর্তী পাইকগাছা বাকা বাজার ও কয়রা উপজলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কয়েকটি খটিঘরে নিয়ে আগুনে শুকিয়ে উচ্চমূল্যে বেচাবিক্রি করে আর্থিক ফায়দা লুটে নিচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জেলে বলেন, আমরা সুন্দরবনের মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। বন্ধের সময় আমরা সারা বছর যা রোজগার করি ভাল ভাবে সংসার চলত কিন্তু কোম্পানী নাম ধারী এক সিন্ডিকেটের জাতা কলে আমরা জেলেরা অভাব কাটিয়ে উঠতে পারিনা। তাদের মাছ না দিলে আমাদের হুমকি ও মারধর ও করছে। তারা প্রভাবশালী তাদের সাথে ভাল সম্পর্ক ছাড়া আমরা সুন্দরবনের মাছ কাঁকড়া কিছুই ধরতে পারবো না। বিভিন্ন মামলা খাওয়ার ভয়ে মুখ বুজে সহ্য করি কষ্ট হলেও। তাদের হাত অনেক লম্বা তারা সবাইকে ভাগা গিয়ে সকল জেলেদর নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
এ ব্যাপারে কাশিয়াবাদ ফরেষ্ট ষ্টেশন কর্মকর্তা মোঃ আখতারুজ্জাশান উৎকোচ নেওয়ার কথা অস্বিকার করে বলেন, বর্তমানে পাস পারমিট বন্ধ। এ সময়ে জেলেদের বনে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। অবৈধভাবে বনে ঢুকে যারা মাছ শিকার করছে তাদেরকে ধরে আইনগত ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রতিদিন মাছ ধরে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য না করে বলেন আমরা অবৈধভাবে সুন্দরবনে যেই প্রবেশ করছে আমরা তাকে ধরছি। কয়রা থানা অফিসার ইনচার্জ এমবিএমএস দোহ (বিপিএম) বলেন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমরা আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। ইতোমধ্যে বিষ দিয়ে মারা মাছসহ আটক করা হয়েছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।