Thu. Mar 30th, 2023

নদী খননে প্রাণ ফিরে পেল পঞ্চগড়ের ছোট-বড় ৬ নদী

উমর ফারুক পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি :
নদীকেন্দ্রিক কৃষি অর্থনীতির প্রাণ সঞ্চার, মৎস্য চাষ বৃদ্ধি, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার হ্রাস করা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে খনন করা হয়েছে পঞ্চগড়ের ছোট-বড় ৬ নদী ও ১ টি খাল।  এ নদীর খননকাজ শেষে  নদীর দুই পাড়ে বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে ।  এতে দুই পাড়ের মানুষ জীবনযাত্রা ও প্রকৃতিতে প্রাণ ফিরেছে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।  অবশিষ্ট নদী খননের জন্য জেলার প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প উপস্থাপন  পিরণ করা হয়েছে । দেশের নদ-নদী ও পরিবেশ রক্ষায় ডেল্টা প্লান-২১০০ বাস্তবায়নে পঞ্চগড় জেলায় শতবর্ষী ৬ টি নদী ও ১টি খাল খনন করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পানি সম্পদের সুষম বণ্টন ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় জনগণের জীবনমান উন্নয়নে পানির চাহিদা পূরণ, টেকসই উন্নয়ন এবং পুনঃখননের মাধ্যমে ছোট নদী, খাল ও জলাশয়গুলো পুনরুজ্জীবিত করা, পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সেচ সুবিধা নিশ্চিতসহ মৎস্য চাষের উন্নয়ন, নদীর উভয় তীরে বনায়ন, খননকৃত মাটি দ্বারা উভয় তীরের ভূমি উন্নয়ন, পরিবেশ ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধন করার লক্ষ্যে এসব নদী ও খাল খনন করা হয়েছে। আর এসব নদী ও খাল খননে হাজারো হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পাচ্ছে কৃষক। পঞ্চগড়ে নদী খনন বাস্তবায়নের ফলে ছোট নদী, খাল এবং জলাশয়গুলোতে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বছরব্যাপী সেচ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব হবে। পুনঃখননে এই নদী-খাল ও জলাশয়গুলো যেন জীবন ফিরে পেয়েছে। ফলে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহজতর এবং নদী ও জলাশয়ের তীরে বনায়ন করার ফলে পরিবেশ ও আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নয়ন সাধন সম্ভব হবে। ভূমি উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারসহ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি এলাকাবাসী বহুমাত্রিক ব্যবহার ও সুবিধার আওতায় এসে উপকৃত হচ্ছে । খননকৃত মাটিদ্বারা উভয়তীরের ভূমি উন্নয়ন ও পরিবেশ ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধন করাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মৃতপ্রায় নদীগুলোর প্রাণ ফেরাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬৪ জেলায় ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯, ১৯-২০, ২০-২১, ২১-২২ অর্থ বছরে পঞ্চগড়ের ৬ টি নদী ও ১টি খাল  পুনঃখনন কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার চাওয়াই নদীর ২০ কিলোমিটার, তেঁতুলিয়া উপজেলার ভেরসা নদীর ১০ কিলোমিটার, দেবীগঞ্জ উপজেলার বুড়িতিস্তার ২০ কিলোমিটার, বোদা উপজেলার পাথরাজ নদীর ৩০ কিলোমিটার , এবং আটোয়ারী উপজেলার বড়সিংগিয়া খালের ৬ কিলোমিটার, রশেয়া নদীর ৬.৯০০ কিলোমিটার এবং দেবিগঞ্জ করতোয়া নদীর ১৫ কিলোমিটার শেষ হয়েছে। পুনঃখননের পর নদীগুলো ফিরে পেয়েছে প্রাণ। নদীর নাব্য বৃদ্ধি ফলে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষ বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গনের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে। আর নদী কেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য পেয়েছে নতুন ছন্দ। এখন শুকনো মৌসুমেও এসব নদীতে মিলছে পানি। এতে নদীর সৌন্দর্য বেড়েছে। জলে মিলছে নানা প্রজাতির মাছ আর জলজ উদ্ভিদ। ১২ মাস সেচসুবিধা পাওয়ায় নদীর তীরবর্তী কৃষি জমিগুলো ফসলে ভরে গেছে। দেবিগঞ্জ পৌর এলাকার আসাদুজ্জামান বলেন, দেবিগঞ্জ করতোয়া নদীটি খনন করায় গভীরতা যেমন বেড়েছে তেমনি শুকনো মৌসুমেও পানি মিলছে। সরকারের মহৎ উদ্যোগের কারণে নদীগুলো যেমন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে তেমনি পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা পেয়েছে। রশেয়া দিনমাড়া বাজার থেকে শরিফুল  বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগে কোন সরকার নদী বাঁচাতে কোন উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নদী ও পরিবেশ বাঁচাতে ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ হাতে নিয়েছেন। নদীগুলো পুনঃখনন করে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে। এছাড়া নদী দখল মুক্ত করতে চালানো হচ্ছে অভিযান। আটোয়ারীর বড়সিংগিয়া এলাকার সামসুল বলেন, খালটি পুনঃখনন করায় আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। আগে আমাদের জমিগুলো বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকতো। পানি বের হওয়ার পথ ছিল না। এখন খালটি পুনঃখনন করে দেয়ায় পানি সরে যাওয়ার পথ তৈরি হয়েছে। এখন আমরা অনেক ধরনের ফসল ফলাতে পারছি। তেঁতুলিয়ার ভজনপুর বামনপাড়া এলাকার বশিরউদ্দিন বলেন, আগে নদীতে বেশিরভাগ সময় কোন পানি থাকত না। এখন নদীতে বারোমাস পানি থাকে। এতে মাছ যেমন বেড়েছে তেমনি নদীর পানি নিয়ে আমরা বিভিন্ন ফসল চাষ করছি। পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী  মোঃ হাফিজুল হক জানান,  পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন প্রকল্পের আওতায় জেলায় ১৭০ কিলোমিটার নদী পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে ৬ টি নদী  ও ১ টি খালের ৮৭.৯ কিমি খনন করা হয়েছে।  ইতিমধ্যে ৮৩৩৮.৯৬ লক্ষ্য টাকা ব‍্যয় হয়েছে। পঞ্চগড়ের অধিকাংশ নদীই স্যান্ডিসয়েল বালি মাটি। যার কারণে বালু আবার নদীতে গিয়ে পরে। বেশিরভাগ নদী পাহাড়ী ঢল থেকে উৎপন্ন। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী সুফল পেতে হলে নদীগুলোকে পর্যায়ক্রমে পুনঃখনন কাজ চলমান রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, ডেল্টাপ্লান ২০২১ বাস্তবায়ন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে , ছোট নদী, খাল এবং জলাশয়গুলোতে পানি প্রবাহবৃদ্ধি, বছরব্যাপী সেচসুবিধার ফলে কৃষি উৎপাদন ও মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ এই প্রকল্প দেশের জলবায়ু মোকাবেলা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আজির উদ্দিন (সেলিম)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মোছাঃ হেপি বেগম ।I বার্তা সম্পাদক: মোঃ ছাদিকুর রহমান (তানভীর)
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়:২/২৫ ইষ্টার্ন প্লাজা,৩য়-তলা ,আম্বরখানা,সিলেট-৩১০০।
+8801712-783194
dailyhumanrightsnews24@gmail.com