কিনব্রিজ না ভাসমান বাজার!

hhnhghn
সিলেটের ঐতিহ্যবহনকারী কিনবিজ্র যেন এখন পুরোটাই ভাসমান বাজার। দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া বৃটিশ আমলের এ ব্রিজটি রক্ষায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এর উপর দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলো সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
ওই সময় কিন ব্রিজের ‘দখল’ নিয়েছিলো হকাররা। সেই থেকে তাদের আর হটাতে পারেনি কেউ। প্রতিদিন শতাধিক হকার ব্রিজের দুপাশে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিনের মতো পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন শতাধিক হকার। লোকজন ভিড় করে কিনছেন নানা জিনিস।
সিলেট ভিউ’র খবর নিয়মিত পেতে
দিয়ে যুক্ত থাকুন
কিনবিজ্র হকারদের দখলে থাকার কারণে পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি ঘটে ছোটখাট দুর্ঘটনা। বর্তমানে কিনব্রিজের উপর দিয়ে দিন-রাত চলাচল করে রিকশা-সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন। ফলে ভোগান্তি ও দুর্ঘটনা বেড়েছে। কিন্তু কিনব্রিজ থেকে হকার হটাতে সিসিক, ট্রাফিক বা বন্দরবাজার ফাঁড়ির পুলিশকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
১৯৩৪ সালে সিলেট শহরের মধ্যখান দিয়ে চয়ে চলা সুরমা নদীর উপর তৎকালীন আসামের গভর্নর মাইকেল কিন প্রথম লোহার এই ব্রিজ তৈরি করেন। যা পরবর্তীতে তার নামানুসারে হয় ‘কিনব্রিজ’। সময়ের পরিক্রমায় ব্রিজটি হয়ে ওঠে ঝুঁকিপূর্ণ। বিপদ এড়াতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে কিনব্রিজ দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সিসিক। এ সময় ব্রিজটির সংস্কার কাজেরও ঘোষণা দেওয়া হয়। ব্রিজটি দুর্বল হয়ে পড়ায় অনেক বছর আগেই এর উপর দিয়ে ভারি যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এরপর থেকে শুধুমাত্র রিকশা চলাচল করে আসছিল এই ব্রিজটির উপর দিয়ে। কিন্তু যানবাহন বন্ধের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করে বেশিদিন রাখা যায়নি। ২০১৯ সালের ওই সময় যানবাহন বন্ধের জন্য ব্রিজের দুমুখে গ্রিল দিয়ে বন্ধ করেছিলো সিসিক। কিন্তু দক্ষিণ সুরমা দক্ষিণ পাড়ের বিভিন্ন এলাকার মানুষের দাবির মুখে কিছুদিনের মধ্যে গ্রিল কেটে রিকশা চলাচলের জন্য উপযোগী রাস্তা করা হয়। পরবর্তীতে সে গ্রিল ভেঙে গেলে আর মেরামত করেনি সিসকি।
যানবাহন বন্ধ করার সময় সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, কিনব্রিজ হচ্ছে সিলেটের ঐতিহ্য। তাই এটিকে সংরক্ষণের লক্ষে সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিনব্রিজকে দৃষ্টিনন্দন করার পাশাপাশি সিসি ক্যামেরারও আওতায় আনা হবে। যাতে এই ব্রিজে কেউ নিরাপত্তাহীনতায় না ভুগেন। ব্রিজটিকে পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণীয় করে তোলা হবে। কিন্তু এর পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং সিসিকের ঠেলাঠেলিতে ব্রিজটিতে আর হয়নি সংস্কার কাজ। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজের উপর দিয়ে রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এমনটি পিকআপ-মিনি ট্রাকও চলাচল করে।
এদিকে, ২০১৯ সালে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সময় কিনব্রিজের ‘দখল’ নিয়েছিলো হকাররা। সেই থেকে তাদের আর হটাতে পারেনি কেউ। প্রতিদিন শতাধিক হকার কাপড়চোপড়, জুতা, ইলেক্ট্রনিক্স ও মোবাইল সরঞ্জাম, সবজি, ফলমূল, প্রসাধনসামগ্রীসহ নানা ধরনের পসরা নিয়ে ব্রিজের দুপাশে বসে থাকেন। এতে পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ঘটে ছোটখাট দুর্ঘটনা। কিন্তু কিনব্রিজ থেকে হকার হটাতে সিসিক বা ট্রাফিক পুলিশকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানাধীন বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস.আই সাবেদুল করিম সিলেটভিউ-কে বলেন, হকার বসলেই আমরা অভিযান চালিয়ে তুলে দেই।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) নায়হানুল বারী বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় সিলেটভিউ-কে বলেন, ‘বিষয়টি ডিসি (ট্রাফিক) স্যারকে জানাচ্ছি। এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’