হারিয়ে যাওয়া আরিফাকে বাবার হাতে তুলে দিলেন নির্বাহী অফিসার মাসুদুল হক

উমর ফারুক পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি :পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়ামে সোমবার ( ১৪ মার্চ ) সন্ধ্যা ৭: ৩০ মিনিটে মোছা: আরিফা (১১) নামের শিশুর কান্না শুনে এগিয়ে যায় কয়েকজন তরুণ । একটি শিশুকে ঘিরে মানুষের ভিড়। ১১ বছরের একটি মেয়ে। পড়নে ফ্রক এবং হাতে একটি পলিথিনের শপিং ব্যাগ। মেয়েটি চিৎকার করে বলছে,“আমি মার কাছে যামু, ও মাগো তুমি কই?”আশেপাশের মানুষদের কাছ থেকে জানা গেলো বেচারি হারিয়ে গেছে। মুহূর্তেই ভিড় বাড়ছে। আশেপাশের মানুষজন বিক্ষিপ্তভাবে ওকে প্রশ্ন করছে- কি হইছে, বাড়ি কই, সাথে কে ছিল ইত্যাদি। এত মানুষের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে আরও ভীত হয়ে আর্তচিৎকার করছে। যুবক গুলো এগিয়ে গিয়ে বিক্ষিপ্ত প্রশ্নমালা থামিয়ে দেয়। তারপর শিশুটির মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করে- “আপু, কি নাম তোমার?”বাচ্চাটি যুবকদের দিকে তাকায়। তারপর বলে- “মোছা: আরিফা ”“বাসা কোথায়?” “হরিনাবাড়ী ”মানুষ গুলো বুঝতে পারেনা। আবার জিজ্ঞেস করে। শিশুটি একই উত্তর দেয়। তখন পাশের এক ভদ্রলোক বলে- “কি, বল্লা হরিনাবাড়ী ?” এবার শিশুটি বলে, “জি” মানুষ গুলো বুঝতে পারে মেয়েটির বাড়ি হরিনাবাড়ী গ্রামে। এবার জিজ্ঞেস করে-“এখানে আসছ কোথায়?” জানিনা, বাসে উঠে চলে এসেসি তোমার বাবার নাম কি, আব্দুল হাই “কারও মোবাইল নাম্বার আছে? “না” মেয়েটি বুঝতে পারছে না কি করবে। এর মাঝেই সুদর্শনা দুই তরুণীর আগমন। অপেক্ষাকৃত কমবয়সী তরুণী ভীতবিহবল মেয়েটিকে কাছে টেনে নিলো। ওকে আশ্বাস দিল মাকে খুঁজে দিবে। মানুষজন ভাবছে, ভারী মুশকিলের ব্যাপার। কি করা যায় মেয়েটির পরিবারের খোঁজ কিভাবে পাওয়া যাবে। পরে সেখান থেকে মেয়েটিকে নিয়ে আসা হল উপজেলা পরিষদে । খবর দেওয়া হলো উপজেলা নির্বাহি অফিসার মাসুদুল হক কে । তিনি আসলেন মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, মেয়েটি নিজের নাম মা বাবার নাম আর গ্রামের নাম ছাড়া কিছুই বলতে পারছি না । পরে হরিনাথ পুর ইউনিয়নের নাম ধরে অনলাইনে সার্চ করেন নির্বাহি অফিসার মাসুদুল হক। বেরিয়ে এল মেম্বারের নাম ও মোবাইল নাম্বার। মেম্বার পরিচয় দেয়, আমি মোঃ শাহারুল ইসলাম, হরিনাথ পুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য । নির্বাহি অফিসার জিজ্ঞেস করেন আপনি আব্দুল হাইকে চিনেন। জি চিনি একটু যোগাযোগ করে দিতে পারবেন । জী পারবো একটু অপেক্ষা করেন । আব্দুল হাই এর বাসা চলে গেলেন ইউপি সদস্য শাহারুল ইসলাম , এবার মোবাইল ফোনে কথা হচ্ছে নির্বাহি অফিসার মাসুদুল হক এবং আরিফার বাবা আব্দুল হাই এর সাথে , নির্বাহি অফিসার সালাম দিয়ে বললেন, আমি পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো: মাসুদুল হক বলছি। আপনি কি আব্দুলহাই বলছেন। জি স্যার বলছি , আপনার বাসায় কি কোনো সমস্যা হয়েছে। জি স্যার আমার ১১ বছরের মেয়ে আরিফাকে সকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । সমস্যা নেই আপনার মেয়ে আরিফা আমাদের কাছে সুরক্ষিত অবস্থায় আছে। আপনি এসে আপনার মেয়েকে নিয়ে যেতে পারেন। ঠিক আছে স্যার আমি আসতেছি । পরে মেয়েটির বাবা না আসা পর্যন্ত পঞ্চগড় সদর থানায়,নারী, শিশু ও বয়স্ক প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডিস্কে মেয়েটির সুরক্ষার জন্য রাখা হয় । পরে আজ মঙ্গলবার ( ১৫ ই মার্চ) সকালে মেয়েটির বাবা আসেন। এবং জিজ্ঞাসা করলে জানা জায়, মেয়েটির বাসা গাইবান্ধা জেলার, পলাশবাড়ী উপজেলার, হরিনাথপুর ইউনিয়নের হরিনাবাড়ী গ্রামে। এবং সঠিক তথ্য নিয়ে নির্বাহী অফিসার মো: মাসুদুল হক এর উপস্থিতিতে, এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, এস আই ও নারী-শিশু বয়স্ক প্রতিবন্ধী সার্ভিসের কর্মকর্তা রাসু বেগম , উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রশিদ, সমাজ সেবা অফিসারসহ নাম না-জানা আরো অনেকেই উপস্থিত থেকে মেয়ের বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয় । নির্বাহি অফিসার মাসুদুল হক জানান, ১১ বছরের ছোট মেয়ে মোছা: আরিফা স্টেডিয়ামের ভিতর কান্না কাটি করতে দেখে এগিয়ে যায় কয়েকজন তরুণ এবং আমার কাছে নিয়ে আসলে আমি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। এবং জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তার বাড়ী হরিনাবাড়ী এবং নাম আরিফা এতটুকুই বলতে পারে। পরে অনলাইনের মাধ্যমে ইউনিয়নের মেম্বার চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় তার বাবার সাথে যোগাযোগ করলে খবর পেয়ে আরিফার বাবা আজকে সকালে পঞ্চগড়ে আসে। আমারা সঠিক তথ্য নিয়ে তাদের কাছে হস্তান্তর করি । এবং মেয়েটির হাতে খাওয়া এবং যাতায়াতের জন্য নগদ অথ্য দেওয়া হয়। আরিফার বাবা না আসা পযর্ন্ত পঞ্চগড় সদর থানার তত্বাবধানে ছিল।