জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ ও সচেতনতা।

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ মোঃ আনোয়ার হোসেন।
২২ মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর ২২ মে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস হিসাবে পালন করা হয়। এবছরের প্রতিপাদ্য “উই আর পার্ট অব সলিউশন ফর নেচার’ বা ‘আমরা প্রকৃতির সমাধানের অংশ”। পৃথিবীতে অসংখ্য জীব রয়েছে, সকল জীবের সম্মিলনই জীববৈচিত্র্য। আয়তনে ছোট হলেও ৩০টি কৃষি পরিবেশগত অঞ্চল, ১৭টি হাইড্রলজিক্যাল অঞ্চল, ২৩০টি নদ-নদী, দুনিয়ার বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য, দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, সেন্টমার্টিনের মতো প্রবাল দ্বীপ, হাজারো ধানের জাত, ৪৫ জাতিসত্তা নিয়ে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি, স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রজাতি ১২৫, পাখি প্রজাতি ৬৫০, সরীসৃপ ১২৬, উভচর প্রজাতি ২২, ২৬৫ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ, ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ , ৩২৭ জাতের খোলসযুক্ত প্রাণী নিয়ে জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ আমাদের বাংলাদেশ। নানা কারণে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, প্রাকৃতিক সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত আহরণ, জলাভূমি, নদ-নদী দখল-ভরাট-দূষণ, কৃষিতে অপরিকল্পিত ভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার, ভুগর্ভস্থ পানির অত্যাধিক উত্তোলনে বাংলাদেশের পরিবেশ আজ বিপর্যস্ত। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরিবেশ – প্রতিবেশব্যবস্থা ও জীববৈচিত্র্যের ওপর নেমে আসে বিপর্যয় যা মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরুপ। এমতবস্তায় ‘জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ ও সচেতনতা’ এপ্রেক্ষিতে পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ -এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস ২০২১ উপলক্ষে আজ ২২ মে ২০২১, শনিবার, সকাল ১১ টায় রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের কার্যালয়ে আয়োজিত “বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য এবং আমাদের ভাবনা”-শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ-এর সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারন সম্পাদক জি.এম রোস্তম খান অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সহ-সভাপতি, মোঃ সেলিম, ন্যাপের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য এস কমরুন, নির্মূল কমিটি ঢাকা মহানগরের সমন্ময়ক আবদুল্লাহ, অনলাইনে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)র যুগ্ন সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, সিটিজেন রাইটস মুভমেন্ট এর মহাসচিব তুষার রেহমান, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা, দ্যা গেøাবাল গ্রীন ফোর্স এর সমন্ময়কারী লেনিন বসু, গনমাধ্যম কর্মী মোঃ আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ বলেন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি রোধ করার অর্থ হচ্ছে মানুষের জীবন-জীবিকা সুরক্ষা ও ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিনিয়োগ করা। জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি আমাদের স্বাস্থ্যসহ সকলকে হুমকির সম্মুখীন করবে। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি জুনোজ প্রসারিত করতে পারে (প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত রোগ) অন্যদিকে, যদি আমরা জীববৈচিত্র্য অক্ষুন্ন রাখি তবে এটি করোনাভাইরাসের মতো মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দুর্দান্ত সরঞ্জাম সরবরাহ করবে।
বক্তারা বলেন, জীববৈচিত্র্য আমাদের তথা বিশ্বের মূল্যবান সম্পদ। দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা জীববৈচিত্র্যের মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের বেঁচে থাকার উপকরণ পাই এবং বিভিন্ন ধরণের বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশ পদ্ধতির সাথে প্রাণী, উদ্ভিদ ও অণুজীব নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। বাস্ততন্ত্রের যেকোনো একটি উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রজাতির বিলুপ্ত হওয়ার অর্থ সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রজাতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত খাদ্য শৃঙ্খলে বিঘœ ঘটা। তাই বাস্ততন্ত্রের সার্বিক ভারসাম্য রক্ষায় জীববৈচিত্রের গুরুত্ব অনবদ্য। জীববৈচিত্র্যের জন্যই মানুষ তার ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা প্রকৃতি থেকে মেটাতে সক্ষম হয়। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বেঁচে থাকার জন্য জীববৈচিত্র্য প্রয়োজন। কিন্তু মানুষের কিছু কর্মকান্ডের জন্য জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে মানুষের চরম ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মানুষের ক্রিয়াকলাপ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং প্রকৃতির অবক্ষয়কে চালিত করছে, তবে আমরা ঐক্যবন্ধ ভাবে জিনিসগুলি ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করতে পারি। প্রকৃতির ভেতর মানুষই খাদ্যের উপর শতভাগ অন্যের (প্রাণীসম্পদ, বৃক্ষ-লতা, শস্য, মৃত্তিকা) উপর নির্ভরশীল। সুতরাং মানুষের প্রয়োজনেই পৃথিবীর সকল প্রাণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া জরুরি। কভিড-১৯ মহামারী দেখিয়েছে যে আমাদের সাধারণ চ্যালেঞ্জ গুলির সমাধানের জন্য বিশ্বকে একসাথে কাজ করতে হবে। আমরা সবাই মিলে সমাধানের অংশ হতে পারি। প্রকৃতি ভিত্তিক সমাধান থেকে শুরু করে জলবায়ু, স্বাস্থ্য সমস্যা, খাদ্য ও পানি নিরাপত্তা এবং টেকসই জীবিকা, জীববৈচিত্র্য হল সেই ভিত্তি যার উপর ভিত্তি করে আমরা আরও ভালভাবে ফিরে আসতে পারি। মানুষ প্রকৃতির অংশ এবং প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার প্রধান সহযোগী, তাই ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাচাঁতে মানুষকে অবশ্যই জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধানের অংশ হতে হবে।